Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংষ্কৃতি

বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রাচীন ইতিহাস ধারণ করে আছে। চন্দনা, হড়াই, গড়াইয়ের সমতলে পলল মাটির উর্বর ভূমিতে আবহমানকালের প্রাচীন ঐতিহ্যের লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে।রাজবাড়ী জেলার মানুষের মধ্যে জীবন-যাপনে, খাদ্য, কাজকর্ম, চলাচল, বাসভূমি বৈচিত্র আছে। এ ছাড়া ভাবপ্রকাশ, ব্যবহার রীতি, আদানপ্রদান এবং ভাষা ব্যবহারেও অঞ্চলভিত্তিক বিশেষত্ব আছে।  এ উপজেলার ভৌগলিক অবস্থানে কুষ্টিয়া, যশোহর, ফরিদপুর, পাবনা ও মানিকগঞ্জ এর প্রভাবে প্রভাবিত। এসব জেলা থেকে কম বেশী মানুষের রাজবাড়ী জেলায় অভিবাসিত হলেও বেশী পরিমাণ অভিবাসন রয়েছে পাবনা জেলা থেকে। ষাটের দশকে কুমিল্লা, নোয়াখালী থেকেও কিছু পরিমাণ মানুষের অভিবাসন ঘটে এ উপজেলায়। এককালে এলাকাটি হিন্দু প্রধান এলাকা ছিল। এখনও অনেক হিন্দু বসবাস করে। হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একে অপরের সাথে ভাব ভালবাসার অভাব নেই। মুসলমানদের বাড়ীর দাওয়াত হিন্দু খায়, হিন্দুর নিমন্ত্রণে মুসলমান তাদের বাড়ীতে যায়।  মুসলমান একে অপরকে দেখলে সালাম এবং হিন্দু আদাব প্রদান করে। তবে সকলেই জীবনাচরণ একসাথে, এক  মাঠে একঘাটে।

ভাষা ব্যবহারে এখানকার মানুষের বিশেষত্ব রয়েছে। এরা ভাইকে বাই, উঠানকে উঠোন, কেমন করে অর্থ্যাৎ ক্যাম্বা, যেমনকে অর্থ্যাৎ য্যাম্বা, খাওয়াকে বলে খাবনে যাওয়াকে বলে যাবনে, যাওনা কেন বলবে যাসনে কেন, আসিসনে কেন, হওয়াকে বলে হয়া, যাওয়াকে বলে যাওয়া, বেগুনকে বলে বাগুন, লাউকে কদু, কুকুরকে কুত্তো, কুমড়াকে কুমড়ো, তেলেকে তেলো বলে। আবার পাবনার প্রভাবিত অনেকে ‘‘স’’ এর স্থলে ‘‘হ’’ উচ্চারণ করে যেমন সবকে হব, সুঁইকে হুই, সন্ধাকে হন্দে ভাষা ব্যবহার করে।

এরূপ নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতির প্রবাহ রয়েছে এ উপজেলায়।

 

বালিয়াকান্দি উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক  অবস্থান এই উপজেলার মানুষের  ভাষা ও  সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই তবুও আঞ্চলিক ভাষায় কিছুটা বৈচিত্র খুজে পাওয়া যায়। বালিয়াকান্দি উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে কুষ্টিয়া অঞ্চলের ভাষার অনেকটা সাদৃশ্য রযেছে। বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়া,বহরপুর, সোনাপুর, প্রাচীন ভূমি বলে চিহ্নিত। এ উপজেলার জংগল ইউনিয়নের জনপদ সৃষ্টি প্রাচীন ভূমি বলে জানা যায়। জংগল ইউনিয়নে অল্প দিন পূর্বে ও জনগোষ্ঠীর একশত ভাগ ছিল হিন্দু। নৃ-তাত্ত্বিক বিচারে তারা আদি দ্রাবিড় ও ভোটচিন গোষ্ঠীর লোক। চন্দনা, গড়াই, হড়াই, পুশষলী প্রভৃতি নদী বালিয়াকান্দি মানুষের আচার আচারন খাদ্যাভ্যাস, ভাষা সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।

 

          এ এলাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে  দেখা যায় বালিয়াকান্দির সভ্যতা বহু প্রাচীন। ষোড়শ  শতকে ভূষণা পাবনার জমিদার মুকন্দ রায় বৃটিশ শাসন আমলে রানী হর্ষমুখীর সময়ে সভ্যতার গোড়া পত্তন ঘটে। এখানকার নীল বিদ্রোহ সাহসীকতার এক জলন্ত স্বাক্ষী। সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যে পরিমন্ডলে বালিয়াকান্দির অবদান অনস্বীকার্য। বিষাদ সিন্ধু খ্যাত মীর মশাররফ হোসেন, স্বামী সমাধি প্রকাশ আরণ্য মহা প্রভু, রাজা শীতারাম রায়, সৈয়দ মীর মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক বিজয় চন্দ্র মজুমদার, কাঙ্গালিনী সুফিয়া প্রমুখের শিল্প ও সাহিত্যের স্মৃতি বিজরিত বালিয়াকান্দি উপজেলা।